রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০০৯

নৃতত্ত্ব

এ লেখাটা ঠিক আমার বলা চলে না৷ কারণ আমি এটা বৈজ্ঞানিক বুধোবাবুর গবেষণার খাতা থেকে প্রায় হুবহু টুকে দিয়েছি৷ কেবল বুধোবাবুর অত্যাধুনিক যুক্তাক্ষর মুক্ত বানানগুলো পাল্টে একালকার মতো করে নিয়েছি৷ শুধু যুক্তাক্ষর নয়, ভাষার অন্যান্য ব্যাপারেও বুধোবাবু কম করে পাঁচশো বছর এগিয়েছিলেন, তিনটের বদলে একটা স, দুটোর বদলে একটা র দিয়ে কাজ চালিয়ে গেছেন৷ সেগুলোও বাধ্য হয়ে পাল্টাতে হয়েছে৷ নাহলে বুধোবাবুর ভাষায়, ‘সুনদোর সিসুদের সোনধেবেলা বারিতে বসে পরাসোনা করা উচিত’ লিখলে আপনাদের পরতে, সরি, পড়তে অসুবিধে হত৷

মৃত্যুর আগে বুধোবাবু তাঁর টাকাপয়্সা সব বঙ্গীয় পশু সেবা সমিতিকে দান করে গেছেন, তা দিয়ে তাঁর বাড়িতে বৃদ্ধ ছাগলদের জন্য আশ্রম হবে৷ কেবল স্নেহবশতঃ তাঁর সারাজীবনের গবেষণার ফসল তাঁর নোটবইখানা আমাকে দিয়ে বলে গেছেন কিস্তিতে কিস্তিতে তার থেকে লেখা ছাপাতে৷ নোটবইয়ের লেখা পড়ে কারোর জ্ঞানলাভ হলে তাকে আর বৃদ্ধবয়সে তাঁর ওই আশ্রমের দ্বারস্থ হতে হবে না, তাঁর এইরকম আশা ছিল৷

আমাদের পাড়ার অনেকে অবশ্য বুধোবাবুকে বৈজ্ঞানিক বলে মানতে রাজি নয়৷ তারা বলে বুধোবাবু নাকি ইস্কুলের বেড়া পর্যন্ত পেরোননি, আর তাছাড়া বুক অবধি দাড়ি, ডাঁটি ভাঙা চশমা, তালি দেওয়া ড্রেসিং গাউন আর ছেঁড়া জুতো থাকলেই যদি বৈজ্ঞানিক হওয়া যেত, তাহলে ওইরকম বৈজ্ঞানিক পাগলা গারদে খুঁজলে অনেক পাওয়া যাবে৷

আমি অবশ্য এইসব যুক্তি মানতে রাজি নই৷ ভারতবর্ষে পুরাকালে অনেক মুনি ঋষি জন্মেছেন, তাঁদের আমরা এখনো শ্রদ্ধা করে থাকি, কিন্তু তাঁরা সব মাধ্যমিক পাস করেছিলেন, এমন কথা কোন ইতিহাস বইতে লেখে না৷ তাছাড়া বৈজ্ঞানিকদের যে স্যুটের বিজ্ঞাপনের মত সাজগোজ করতে হবে, তারই বা কি মানে আছে ? নিন্দুকের কথায় কান দিয়ে কাজ নেই, বরং নোটবইয়ের লেখার কথায় আসি৷

বুধোবাবু বহুমুখী প্রতিভা ছিলেন, সমস্ত বিষয়ে তাঁর অবাধ গতি ছিল, লেখেননি এমন বিষয়বস্তু নেই৷ প্রথম লেখাটা নৃতত্ত্বের ওপর৷ নিচে দিলাম, পড়ে আপনারাই বিচার করুন, বুধোবাবু বৈজ্ঞানিক ছিলেন কি ছিলেন না৷
বুধোবাবুর লেখা --

আদিতে যখন বানর সবে মন্যুষত্ব পেয়ে দুপায়ে দাঁড়াতে শিখছে, তখন সেই অর্দ্ধমানবের্ নাম ছিল হোমো ইরেক্টাস৷ এই হোমো ইরেক্টাস আজকের সভ্য মানুষ হয়ে ওঠা অবধি নানা প্রজাতির মধ্য দিয়ে তার বিবর্তন হয়েছে৷ সেই সব প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেলেও, তাদের মানসিক গঠনের ছাপ আমাদের সমাজের মধ্যে এখনো রয়ে গেছে৷

মানুষ প্রথমে শিকার করে খেত৷ আগে শিকারের মাথায় ধাঁই করে একঘা মুগুরের বাড়ি বসিয়ে দিলো৷ তারপর সেটাকে ঠ্যাঙ ধরে টানতে টানতে আস্তানায় নিয়ে গিয়ে তার ছালটা ছাড়িয়ে লুঙ্গি বানালো, আর মাংসটা কাঠের জ্বালে তন্দুরি করে গুষ্টিশুদ্ধু খেলো৷ হোমো ইরেক্টাসের বংশধর এই প্রজাতির নাম আমরা রাখতে পারি হোমো মাংসখাস৷

শিকার করতে গেলে এদিক সেদিক ছুটোছুটি করতে হয়, তারওপর আবার শিকার না পাওয়া গেলে মাঝেমধ্যে উপোসও করতে হয়৷ কাঁহাতক আর ঝক্কি সয়? তাই কিছু মানুষ চাষ করতে শিখলো৷ মাটিতে বীজ পুঁতে জল দাও, আর নেচেকুঁদে বেড়াও৷ ক্রমে মাটি ফুঁড়ে গাছ বেরোবে, সেই গাছে ফল হলে তখন পোয়াবারো, আর কষ্ট করে শিকার করতে হবে না, ঘরে বসে বসে খাবে৷ এই প্রজাতিকে আমরা বলতে পারি হোমো চাষবাস৷

এই দুই প্রজাতি আজকাল সশরীরে পাওয়া না গেলেও, তাদের মানসিকতা আজও সভ্যমানুষের মধ্যে বর্তমান৷ আমাদের সমাজে হোমো চাষবাস আর হোমো মাংসখাস দুইই আছে৷ হোমো চাষবাসের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অল্প অল্প করে উপার্জন করে, আর হোমো মাংসখাসেরা তাতে ভাগ বসায়৷ তাদের জীবন দর্শন হলো, কে আর অত খেটেখুটে রোজগার করে? তার চাইতে বরং লাগাও হালুম করে থাবা৷ যেমন ধরুন নুটুবাবুর কথা৷ ভদ্রলোক ছাপোষা মধ্যবিত্ত হোমো চাষবাস, সারাজীবন শরীকি বাড়িতে অনেক কষ্ট করে কাটিয়েছেন৷ অল্প মাইনের চাকরিতে যা পেতেন, একটু একটু করে জমিয়ে একটা ছোট জমি কিনেছিলেন, আশা ছিল শেষ বয়সে একটা ছোট দোতলা বাড়ি করে তার বারান্দায় বসে চা খেতে খেতে খবরের কাগজ পড়বেন৷

অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নুটুবাবু একদিন জমিটা দেখতে গেছেন, একজন মাঝবয়েসী ভদ্রলোক দুজন ছোকরাকে সঙ্গে করে এসে হাজির হলেন৷
- কি দাদা, এখানে বাড়ি করবেন নাকি?
জমির গর্বে একগাল হেসে নুটুবাবু বললেন,
- হ্যাঁ, এই একটা ছোটখাট দোতলা-
- বাঃ! বাঃ! ভদ্রলোক নুটুবাবুকে উত্সাহ দিলেন – আপনি বাড়ি করবেন জেনে বড় ভাল লাগল৷ আপনাকে দেখেই বোঝা যায় আপনি একজন সজ্জন মানুষ৷ আমাদের পাড়ায় আপনার মতো লোকই তো চাই৷ কিছু দরকার হলে আমাদের বলবেন৷ আমার নাম ভুঁদো দত্ত৷

নুটুবাবু চিরকাল শরীকি বাড়ির অশান্তির মধ্যে কাটিয়ে এসেছেন, এরকম সহৃদয়তায় তাঁর হাসিটা আরো দুইঞ্চি চওড়া হয়ে গেল,
- থ্যাঙ্ক ইউ,থ্যাঙ্ক ইউ, আপনার মতো প্রতিবেশী পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের কথা৷
- আরে ছি ছি, একি বলছেন – লাজুক লাজুক হাসি হাসলেন ভুঁদোবাবু – প্রতিবেশীই তো প্রতিবেশীর জন্যে করে৷ আমরা আপনার জন্যে করবো, আপনি আমাদের জন্যে করবেন, এই আদানপ্রদান নিয়েই তো সমাজ৷ তা আপনি আমাদের একটা অনুরোধ নিশ্চই রাখবেন?

খুব উত্সাহের সঙ্গে নুটুবাবু বললেন,
- হ্যাঁ, নিশ্চই, নিশ্চই৷ বলুন কি করতে হবে?
- এই বেশী কিছু না, আমাদের একটা ছোট ক্লাব আছে, তার জন্যে একটা টিভি কিনে দিতে হবে৷

নুটুবাবুর হাসিটা শুকিয়ে একেবারে বাসি কিসমিসের মত হয়ে গেল৷
- য়্যাঁ! তার মানে?
- হ্যাঁ, ওই ফুটবলের বিশ্বকাপ আসছে না? তা একা একা বাড়িতে বসে কি খেলা এনজয় করা যায়? একটা টিভি হলে আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে ক্লাবে বসে দেখব৷ আপনিও দেখবেন৷
- তার জন্যে আমাকে টিভি কিনে দিতে হবে ? আর্তনাদ করে উঠলেন নুটুবাবু৷
- আরে না না ! আশ্বস্ত করলেন ভুঁদোবাবু- আপনার এই বয়সে কি আমরা আপনাকে ঘাড়ে করে টিভি কিনে এনে দিতে বলতে পারি? আমাদের এই লাখখানেক টাকা দিলে আমরাই কিনে এনে লাগিয়ে নেব৷ আপনাকে শুধু শুধু কষ্ট্ করতে হবে না৷
- একলা-খ টাকা! মনে হলো নুটুবাবুর নাভিশ্বাস উঠছে৷
- বাঃ! অবাক হলেন ভুঁদোবাবু- একলাখ টাকা না হলে বড়সড় প্লাজমা টিভি হবে কি করে? সবাই মিলে বসে দেখবে না? তাছাড়া পাড়ার একটা ইজ্জত আছে না?
- কিন্তু আমি কি করে একলাখ টাকা দেব?
- দেখুন, চালাকি করবেন না – বেশ গম্ভীর হয়ে গেলেন ভুঁদোবাবু – এতটাকা দিয়ে জমি কিনতে পারেন, দোতলা বাড়ি করতে পারেন, আর সমাজ কল্যাণের জন্যে একলাখ টাকা দিতে পারবেন না?
- সমাজ কল্যাণ! নুটুবাবুর প্রায় গঙ্গাযাত্রায়্ যাবার মতন অবস্থা৷
- হ্যাঁ, সমাজ কল্যাণ৷ এত আশ্চর্য হবার কি আছে? আমরা কি সমাজের অঙ্গ নই? তাছাড়া এই কাগা বগা – দুই সঙ্গীর দিকে চোখ তুলে ইশারা করলেন ভুঁদোবাবু- এরা চুপচাপ বসে টিভি দেখলে সমাজের কত কল্যাণ জানেন? নাহলে কোথায় গিয়ে পেটো মারবে, কিম্বা কার মেয়েকে তুলে আনবে, কিম্বা আপনার মতো লোকের ভুঁড়ি ফাঁসিয়ে দেবে তার ঠিক আছে?

ভুঁদোবাবুর মত হোমো মাংসখাসের হাত থেকে রেহাই পাওয়া সহজ নয়, সুতরাং ক্লাবের টিভি কিনে দিয়ে নুটুবাবু সমাজসেবায় হাতেখড়ি করলেন৷ তাতেও অবশ্য হলো না৷ বাড়ি করতে গিয়ে ভুঁদোবাবুর থেকে বাড়ি তৈরির মালমশলা কিনে পাড়ার বেকার ছেলেদের উপকার করতে হলো৷ সেই মাল-মশলার গুণে বাড়ির এমন সুন্দর ত্রিভঙ্গ চেহারা দাঁড়াল, যে পিসার টাওয়ার লজ্জা পাবে৷ তারপর দুর্গাপূজো, কালীপূজো, সরস্বতীপূজো, ঘেঁটুপূজো, সঙ্গীত অনুষ্ঠান, এসবের নামে নিত্য নতুন নজরানা দিয়ে নুটুবাবু তাঁর সামাজিক কর্তব্য বজায় রাখলেন, আর ভুঁদোবাবু তারই দৌলতে দুচারটে মিনিবাস কিনে ফেলে পাড়ার মধ্যমণি হয়ে রইলেন৷

হোমো মাংসখাসেরা আগেকার দিনে রাজা বাদশা হত, এখন নেতা হয়৷ তাছাড়া পুলিশ, সরকারী দপ্তর, রেলের অফিসেও প্রচুর হোমো মাংসখাস পাওয়া যায়৷

হোমো মাংসখাসদেরই একটা শ্রেণী আছে, যাদের আমরা বলতে পারি হোমো কাঁঠালভেঙেখাস৷ এরা অতটা হিংস্র নয়, মাথায় হাত বুলিয়ে কার্যসিদ্ধি করে৷ যেমন আমাদের খাঁদুবাবু৷
একদিন গজেনবাবু বাসস্টপে দাঁড়িযে ঘনঘন ঘড়ি দেখছেন, প্রায় পৌনে নটা বাজল, অথচ বাসের দেখা নেই, আজ লেটমার্ক থেকে আর বাঁচা গেল না৷ এমন সময হাসিহাসি মুখে খাঁদুবাবুর উদয় হল৷
- কি গজেনবাবু, আজ এত দেরি যে?
- আর বলবেন না দাদা, সকালে কলে জল ছিল না, বেরোতে দেরি হয়ে গেল৷ তারপরে এদিকে আবার বাস নেই৷
- তাতে কি হয়েছে? অভয় দিলেন খাঁদুবাবু – আপনার অফিস তো ডালহৌসীতে? আমাকে ওখানে একটা কাজে যেতে হবে, চলুন আপনাকে নামিয়ে দিয়ে যাচ্ছি৷ এই ট্যাক্সি, ট্যাক্সি৷
ট্যাক্সির ফুরফুরে হাওয়া খেতে খেতে গজেনবাবু সবে বৌবাজার মোড় অবধি গেছেন, এমন সময়ে খাঁদুবাবু রোককে, রোককে বলে চেঁচিয়ে উঠলেন৷
আঁতকে উঠে গজেনবাবু বললেন, কি হলো খাঁদুবাবু?
- আর বলবেন না মশাই, মনের ভুলে দরকারি ফাইলটা বাড়িতে ফেলে চলে এসেছি৷ যাই আবার গিয়ে নিয়ে আসি৷

খাঁদুবাবু বৌবাজার মোড়ে নেমে গেলেন, আর গজেনবাবু ডালহৌসী পৌঁছে ট্যাক্সির ভাড়া মেটালেন৷

অবশ্য এটা প্রথম নয়৷ এর আগেও খাঁদুবাবু অনেককে ট্যাক্সি চড়িয়েছেন, হোটেলে খাইয়েছেন, বইমেলায় বেড়াতে নিয়ে গেছেন৷ একবার তো বগলাবাবুকে প্রায় সিঙ্গাপুর পর্যন্ত বেড়িয়ে আনছিলেন, শেষ পর্যন্ত বগলাবাবুর মেয়ে জামাই দিল্লী থেকে এসে পড়ায় সেটা আর হয়ে ওঠে নি৷

হোমো কাঁঠালভেঙেখাসের আমাদের সমাজে কোন অভাব নেই, সর্বত্র পাওয়া যায়৷ অফিসে, কলেজে, পাড়ায়, সব জায়গাতেই এদের দেখা মেলে৷

হোমো কাঁঠালভেঙেখাসের স্বগোত্রীয় একটি প্রজাতি ছিল, হোমো ঘাড়েবসেখাস৷ এটি যৌথপরিবার ব্যবস্থা উঠে যাবার জন্যে প্রায় লুপ্ত হয়ে গেছে, তার আগে যে কোন বড় একান্নবর্তী পরিবারে এদের দু-একজনের দেখা হামেশাই মিলত৷ তবে ইদানীং অনেক পুত্রকন্যারা নিজেদের বৃদ্ধপিতামাতাকে এই প্রজাতি ভুক্ত জ্ঞান করেন, এবং তাঁদের ভরণপোষণের ব্যবস্থাও সেই অনুপাতে নিয়ন্ত্রিত করে ফেলেছেন৷

এইসব প্রধান প্রজাতি ছাড়াও আরো অনেক প্রজাতি আছে৷ তাছাড়া অনেক সময়ে এও দেখা গেছে বয়েস অনুযায়ী প্রজাতির পরিবর্তন হয়৷ যেমন অল্পবয়েসে বাঙালী ছেলেরা যে প্র্জাতির অন্তর্ভুক্ত থাকে, তার নাম হোমো বাজেবকেযাস৷ যে পাড়াতেই থাকুন না কেন, কোন জটলার পাশ দিয়ে গেলে তাদের এইধরণের মন্তব্য আপনি শুনতে পাবেন,
- আরে ভণ্ডুলকর যা খেলল না!
- আরে ওসব বলে কাজ নেই, এখানে ওসব কিছু হবে না৷ ওসব বিলেত আমেরিকায় হয়, আমাদের এখানে ওসব চলবে না৷
- আরো শোন আমি যা বলছি৷ আমার মেজ পিসীর ছোট দেওরের ভায়রাভায়ের জাড়তুতো ভায়ের ছেলে রাইটার্সে কাজ করে৷ তার কাছে খবর আছে ভবেশ ভড় এবারে নির্দলে দাঁড়াচ্ছে৷

এই সব হোমো বাজেবকেযাসদের যখন বয়স হয়, তখন তাদের অনেকেই হোমো সর্বদাহতাশে রূপান্তরিত হয়৷ তাদের তখন কথায় কথায় দীর্ঘশ্বাস পড়ে৷
- (দীর্ঘশ্বাস) আমাদের এ জীবনে আর কিছুই হল না মশাই৷
- (দীর্ঘশ্বাস) আমার বাবার পয়সাও ছিল না, সোর্সও ছিল না৷ তাই আর কিছুই করতে পারলাম না৷
- (দীর্ঘশ্বাস) আর চেষ্টা করে কি হবে? ওদের সব ভেতর থেকে ঠিক করা থাকে৷ শুধু শুধু এদ্দুর থেকে ঠেঙিয়ে যাও, তারপর হা-পিত্যেশ করে বসে থাকো৷ কি হবে গিয়ে!

তবে বাংলার পুরুষমানুষরা সাধারণতঃ হোমো ফাঁকামাঠেজিতেযাস প্রজাতির মধ্যে পড়েন৷ স্রেফ কপাল আর প্রতিপক্ষের অন্যায আচরণের জন্যেই যে এঁরা যে এক-একজন গুণবান, রূপবান, ধনবান গণ্যমান্য ব্যাক্তি হয়ে উঠতে পারেন নি, তা তাঁদের মুখ্ থেকে প্রায়শই শোনা যায়৷
- নেহাত বাঁ-কব্জিটা টনটন করছিল, না হলে দেখে নিতাম ব্যাটাকে৷
- আরে সেবারের অঙ্ক পেপারটা যদি শক্ত না হত, তাহলে আমার লাইফটাইতো অন্যরকম হতো৷ দেখতিস ফার্স্টক্লাস পেয়ে বিলেত্ চলে গিয়ে মার্সিডিজ গাড়ি চড়ছি৷
- ওঃ! ইন্টারভিউতে অতগুলো ছেলে না এলে চাকরিটাতো আমারই বাঁধা ছিল, এতদিনে দেখতেন প্লেনে চড়ে হিল্লীদিল্লী করছি৷

অন্যদিকে বঙ্গরমণীরা কিন্তু হোমো ভালকরেখাস শ্রেণীভুক্ত, বিশেষতঃ তাঁরা যদি মাতৃস্থানীয়া হন৷ তাঁদের মুখে সাধারণতঃ এই ধরণের কথাই লেগে থাকে,
- সেইতো কোন সকালে খেয়েছিস, তোকে আর দুটো ভাত দিই
- ওকিরে! শুধু ভাত খাচ্ছিস কেন? আর একটা মাছ নে৷
- শিগ্গির সব দুধটা খেয়ে নে, নাহলে মারব এক থাপ্পড়৷ বাঁদর কোথাকার!
- কিচ্ছু বেশি রুটি দিই নি৷ ওবাড়ির গুলু তোর থেকে চার বছরের ছোট, সেও তিনটে রুটি খায়, আর তুই খাবি না?

হোমো ভালকরেখাস ছাড়াও বঙ্গরমণীদের আর একটি প্রজাতি আছে, তাদের আমরা বলতে পারি হোমো দেখেশুনেযাস৷
- ভাল করে দুদিক তাকিয়ে রাস্তা পার হবি, যা জোর গাড়ি যায়!
- সুটকেশটা চোখে চোখে রাখবি, দিনকাল ভাল নয়৷ আর দেখিস, কোন অচেনা লোকের সঙ্গে ভাব জমাসনি যেন৷
- বেশি দেরি করিস নি যেন, সকাল সকাল ফিরে আসিস৷

এইসব প্রজাতি নিয়ে ব্যাপক ভাবে গবেষণা হওয়া উচিত৷ আমি নিজেও এই বিষয়ে ইউনিভার্সিটিতে থিসিস জমা দেব ভেবেছিলাম, কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম যে সেখানকার কর্তাব্যাক্তিরা সবাই হোমো মুখস্থবিদ্যেতেপাস প্রজাতির, তাঁরা এই মৌলিক চিন্তার কদর বুঝবেন না৷ সুতরাং নোটবুকে লিখে রাখলাম, ভবিষ্যতে কোন সুযোগ্য লোকের হাতে পড়লে কাজ হবে৷
বুধোবাবুর নৃতত্ত্ববিষয়ক রচনা এখানেই শেষ, আমার লেখাও৷ পাঠকের পছন্দ হয়ে থাকলে বুধোবাবুর নোটবই থেকে পরেরবার অন্য লেখা প্রকাশ করার ইচ্ছে রইল ৷

**(কারিয়া পিরেত ছদ্মনামে ফ্যান্টাসটিকে প্রথম প্রকাশিত)

৪টি মন্তব্য:

  1. আপনার প্রচেষ্টা সফল হোক। শুভেচ্ছা রইলো। ভালো থাকবেন।

    উত্তরমুছুন
  2. Ei khudro prachesta tike otishoy sukhadyo bola uchhit. 'Homo rasikbaaz' projati bhukto manusjoner kotha missed hoye geleo Budhobabur notebook kintu publish howa uchhit. Durdanto hoeychhe lekhakhani abong true reflection ( or reflexion) bibhinno categories. - biswa

    উত্তরমুছুন
  3. অমর মুখার্জী৮ মে, ২০০৯ এ ১২:৫৯ PM

    চমৎকার

    উত্তরমুছুন
  4. www.bdtender.com একটি অনলাইন টেন্ডার/দরপত্র বিজ্ঞপ্তি পরিসেবা পোর্টাল। যেখানে বাংলাদেশের প্রায় সকল টেন্ডার/দরপত্রের (সরকারী এবং বেসরকারী সংস্থা থেকে প্রকাশিত) সাম্প্রতিক তথ্য প্রদান করা হয়। প্রায় ২০০০ নিবন্ধিকৃত সদস্যদেরকে নিয়মিতভাবে ইমেইলের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।
    দেশের সকল জাতীয় এবং আঞ্চলিক দৈনন্দিন সংবাদপত্র, প্রায় ৫৭ টি কাগজ এবং ২৫০টি ওয়েবসাইট থেকে টেন্ডার/দরপত্র সংগ্রহ করা হয়। সেইসাথে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা, এনজিও এবং বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা,তাদের প্রয়োজনীয় টেন্ডার/দরপত্র বিজ্ঞপ্তি সমূহ এই সাইটে প্রকাশ করে থাকে।
    Tender Business Bangladesh.
    এটা কি ফরেক্স'র মত ! bdtender.com একটি অনলাইন টেন্ডার/দরপত্র বিজ্ঞপ্তি পরিসেবা পোর্টাল।

    উত্তরমুছুন